call now : 8017071981

দ্বীনি শিক্ষার অগ্রগতিতে শালুকপাড়া মাদ্রাসার ভূমিকা

মুফতী উবাইদুল্লাহ কাসেমী

শাইখুল হাদীস অত্র মাদ্রাসা

অবক্ষয়ের আবর্তে যখন আমরা সকলেই অল্প বিস্তর আবর্তিত, সমাজজীবন অনেকাংশে বিপর্যস্ত, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা ভঙ্গ প্রায়। সৃষ্টি ভুলে যাচ্ছে তার স্রষ্টাকে, ধরাতলে আসার উদ্দেশ্য বিস্মৃত প্রায়। বিশ্ব চরাচর যে, একই পরিবার, আমরা যে সবাই একই পরিবারের সদস্য ভুলে যেতে বসেছি সে কথা। স্বার্থান্ধতা, সংকীর্ণতা, সাম্প্রদায়িকতা, নিজেকেদিয়েই মগ্ন থাকার অন্ধকারে নিমজ্জিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ ও দেশ। সংকটের এই যুগ সন্ধিক্ষণে আপামর জনসাধারণের সেবায় ব্রতী হওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে, স্রষ্টা ও সৃষ্টির সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে।হতাশাগ্রস্ত সমাজ ও জীবনকে গড়ে তুলতে হাওড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী শীর্ষস্থানীয় পূর্ণাঙ্গ আদর্শ দরসে নিজামী বহুমুখী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শালুকপাড়া মাদ্রাসা আশরাফুল উলুম -র-ভিত্তি প্রস্তর পাঁচ দশক পূর্বে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ,কোন এক শুভক্ষণে এক ঝাঁক সোনালী ব্যক্তিবর্গের গৌরবময় উপস্থিতির মাধ্যমে রাখা হয়। বর্তমানে এই চারা গাছটি আল্লাহর অপার করুণায় আপনাদের অকুণ্ঠ দুয়ায় তিলে তিলে মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা লাভের পরপরই এই প্রতিষ্ঠান নিজ অভিষ্ঠ লক্ষ্যের দিকে অগ্রগামী হয়। মনে রাখতে হবে যে, শালুকপাড়া মাদ্রাসা দরসে নিজামি মাদ্রাসা। প্রবাদপ্রতিম পন্দিত প্রবর আব্দুল হাই হাসানী নদভী উপমহাদেশে মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থার ক্রমবিকাশকে, চার ভাগে ভাগ করেছেন। তথা প্রথম ভাগে সপ্তম হিজরী শতকের শুরু থেকে নবম হিজরী শতকের শেষ পর্যন্ত প্রায় দুশো বছর। হিজরী নবম শতকের শেষে মুলতান থেকে শায়েখ আবদুল্লাহ উসমানী ও তার সতীর্থ শায়েখ আজিজুল্লাহ দিল্লীতে আসেন ও তৎকালীন দিল্লীর সুলতান সিকান্দার লোদী (শাসনকাল ১৪৮৯–১৫১৭) তাদের প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদর্শন করেন।

এখান থেকেই শুরু হলো দ্বিতীয় কালপর্ব এই সময়ে বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান শাখার চর্চা বৃদ্ধি পায়।তৃতীয় কালপর্বেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। আকবরের শাসনামলে (১৫৫৬-১৬০৬) ইরানি কিছু ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান শাখার চর্চা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আবুল ফজল আল কাযরাবানী, আবুল ফজল হুসাইন ও ফাতহুল্লাহ শীরাযী বাদশা আকবরের নৈকট্য লাভ করেন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, আকবরের পিতা সম্রাট হুমায়ুন সেনানায়ক শেরশাহের কাছে পরাজিত হয়ে ইরানের সাফাবী শাসকদের সাহায্য গ্রহণ করেন ও ইরানি প্রভাবের পথ খুলে দেন। তবে এই তৃতীয় কালপর্বে কিছু ভারতীয় ব্যক্তিত্ব হিজাযে যান ও হাদিসের চর্চা বিস্তারে চেষ্টা চালান। চতুর্থ কালপর্বে দরসে নেজামী প্রভাব বিস্তার করে।

দরসে নেজামি-

১৬৭৭-৭৮ সালে বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহালী শহরে জন্ম গ্রহণকারী মোল্লা নেজামুদ্দিন সাহালাভী কর্তৃক প্রণীত আরবী শিক্ষা পদ্ধতিকে দরসে নেজামি বলে আখ্যায়িত করা হয়। সামান্য পরিবর্তনসহ এই পদ্ধতিই আরবী মাদরাসা সমূহে আজও বিদ্যমান। এগারটি স্বতন্ত্র বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয় দরসে নেজামি।

শ্যামপুর থানার অন্তর্গত নাকোল অঞ্চলের শালুকপাড়া গ্রামে 1970 খ্রিস্টাব্দে শালুকপাড়ামাদ্রাসা আশরাফুল উলুম প্রতিষ্ঠা হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানের মূল পরামর্শদাতা ছিলেন ওলানপাড়া নিবাসী সুফিসাধক বহুগ্রন্থ প্রণেতা হযরত মাওলানা কাজী আবু সালেহ শামসুল আলম সাহেব এবং শালুকপাড়া নিবাসী হযরত মাওলানা সুলাইমান সাহেব। ভূমিদাতা অনেকেই আছেন (আল্লাহ সেই দানবীর ভূমিদাতাগণকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তার আওলাদগণকে বরকতে ভরিয়ে দিন) তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মরহুম মাস্টার জয়নাল আবেদীন সাহেব রাইদীঘি।

উক্ত প্রতিষ্ঠান প্রথমে মক্তব আকারে প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্ব প্রথম শিক্ষক ছিলেন মাওলানা মোঃ লোকমান সাহেব ও মরহুমমৌলবিমোজারআলিখান। শ্রদ্ধাস্পদ সভাপতি সাহেব ছিলেন, আল্লাহভীরু সুফিসাধক জনাব হাজী আহমাদহোসেন সাহেব, বারাগোহাল উলুবেড়িয়া। মাননীয় সম্পাদক ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় মান্যবর জনাব মাষ্টার সৈয়দ আহমদ সাহেব শালুকপাড়া। অতঃপর হিফজ বিভাগের শুভ সূচনা হয়। যথাক্রমে মাওলানা বিভাগের প্রাথমিক ক্লাসগুলির দ্বারোদঘাটন করা হয়। তদানীন্তন শিক্ষক হিসেবে আব্দুল মাতিন সাহেব, সম্পাদক ছিলেন জনাব শেখ জামাল উদ্দিন সাহেব। পরিসরের সীমাবদ্ধতার কারণে সম্যকভাবে সমস্ত সম্পাদক সভাপতি মন্ডলীর নাম উল্লেখ করার স্বাদ থাকলেও সাধ্য নেই। আল্লাহই তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। ১৯৭৮ সালে জনাব হাফেজ আব্দুল হামিদ সাহেব মাদ্রাসার নব নাজিম নিযুক্ত হন। পূর্বসূরিদের প্রদত্ত আমানত তথা প্রতিষ্ঠানের শ্রী বৃদ্ধির জন্য অভাব দুরাবস্থার মধ্য দিয়ে লড়াই করে মাদ্রাসার উন্নতিকে তরান্বিত করেন। তাঁর যোগ্য সঙ্গ দান করেন দ্বীনের আরেক অতন্দ প্রহরী হাজী আহমদ হোসেন সাহেবশশাটী ।অতঃপর সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন উদ্ভবপুর নিবাসী কাজী শাহজাহান সাহেব তারপর পুনর্বার সর্বসম্মতিক্রমে মাওলানা রুহুল আমিন সাহেব সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনিও প্রতিষ্ঠানের ক্রমাগত উন্নতি অব্যাহত রাখেন। অতঃপর মাদ্রাসার যথাক্রমে সম্পাদক নিযুক্ত হন বাগনান নিবাসী মোহাম্মদ ইয়াহিয়া সাহেব ওবানিয়া বেলপুকুর নিবাসী হাজী ক্বাসেম আলী সাহেব এবং উলুবেড়িয়া নিমদিঘি নিবাসী মুফতি ইব্রাহিম সাহেব। ২০১৭সালে মাদ্রাসার সমূহ দায়-দায়িত্বের পরিচালনার দায়ভার সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়া হয় মাওলানা মুসাকালিমুল্লাহ কাসেমী সাহেবকে। এবং অদ্যাবধি তিনি একই পদে অধিষ্ঠিত আছেন। তাঁর সময়কালে আল্লাহ তাআলা প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি দান করেন l

এই প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে বহুমুখী প্রতিষ্ঠান যেখানে একই ছাদের তলায় শত শত ছাত্র কোরআনকে আত্মস্থ করছে । পাশাপাশি চলছে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ মাওলানা কোর্স।২০১৮ সাল থেকে স্নাতকোত্তর বর্ষ তথা বিশুদ্ধ দশটি হাদীস গ্রন্থের পাঠদানের মাধ্যমে সুসম্পন্ন করানো হচ্ছে । চলছে অভিনব ইংলিশ ডিপ্লোমা কোর্স যেখানে ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিখ্যাত-খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের পাশ করা উলামায়ে কেরাম এই কোর্সের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে ব্যুৎপত্তি অর্জন করছেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাদের লেখালেখির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় অনর্গল বক্তব্য রাখার যোগ্যতা অর্জন করছেন। অতি সাফল্যের সাথে চলছে যুগান্তরকারী অভিনব একটি কোর্স কর্নাটকের শাহীন গ্রুপ অফ ইনস্টিটিউশন কর্তৃক পরিচালিত"মাদ্রাসা প্লাস কোর্স" যেখানে সদ্য হাফেজ মাওলানা পাশ করা ছাত্ররা মাত্র 18 মাসে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ সম্পন্ন করার পরপরই এক বছরের কোচিং এর মাধ্যমে তাদেরকে NEET পরীক্ষায় বসার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

আর এই সমস্ত কর্মকাণ্ডে তার যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ও নিরলস প্রচেষ্টা করেছেন প্রাক্তন প্রধানশিক্ষকও বর্তমান সম্পাদক মাদ্রাসার প্রাণ পুরুষ হাফেজ আব্দুল হামিদ সাহেব ও সমস্ত সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী। শালুকপাড়া মাদ্রাসায় রয়েছেন এক ঝাঁক উচ্চ ডিগ্রিধারী ও বিভিন্ন খ্যাতনামা ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কৃতি সন্তানগণ। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন স্বয়ং মাদ্রাসার শ্রদ্ধাস্পদ নাজিম জনাব মৌলানা মুসা কালিমুল্লাহ কাসেমী সাহেব এবং দারুল উলুম দেওবন্দের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ও ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির গোল্ড মেডলিষ্ট এবং গবেষক তথা মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস মুফতী ওবায়দুল্লাহ কাসেমী সাহেব। আছেন মাদ্রাসার সহ-সম্পাদক ও মাদ্রাসার প্রাক্তন নাজিম ও হাওড়াজেলা জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দেরসম্পাদক জনাব মুফতি অসীমুল বারীকাসেমী সাহেব ।মাদ্রাসার আর এক অন্যতমশাইখুল হাদিস ও শিক্ষাবিভাগেরপ্রধান জনাব মুফতি হাবিবুল্লাহ সাহেব কাসেমী প্রমুখ।

আলহামদুলিল্লাহ্ বর্তমানে মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা প্রায় ছয় শতাধিক। শিক্ষক ও কর্মচারী ৫৮ জন। মাদ্রাসার বাৎসরিক খরচ প্রায়দুই কোটি টাকা। এই ব্যায়বহুল বৃহত্তম মাদ্রাসা শুধুমাত্র, আল্লাহর অপার করুণা ও আপনাদের ন্যায় ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই বোনদের অকুন্ঠ দানের উপরেই চলে। ইসলাম দরদী মুসলিমদের সাহায্য ছাড়া অন্য কোন আয়ের উৎস নেই এই বৃহত্তম বিদ্যাপীঠের। বর্তমান মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হলেন মাওলানা মুসা কালিমুল্লাহ কাসেমী সাহেব পুত্র বঙ্গবিক্ষ্যাত আলিমে দ্বীন মরহুম মওলানা আলী আকবর সাহেব বেলে সিজবেরিয়া, হাওড়া। যিনি খুবই সুচারুভাবে সমস্ত শিক্ষক ও শুরা ও কমিটির সাথে পরামর্শক্রমে ও শিক্ষকগণের নিরলস সহায়তা ও বলিষ্ঠ ঐক্যের মাধ্যমে অতীব নৈপুণ্যের সাথে মাদ্রাসার ক্রমবর্ধমান উৎকর্ষ সাধন করে চলেছেন। মাদ্রাসা তাঁর তার নেতৃত্বে অবয়বে কলেবরে, শিক্ষার গুণগত মান উন্নতিতে অনেকটাই উৎকর্ষ লাভ করেছে বলে আমরা মনে করি। আপনারা শুনে আপ্লুত হবেন যে, এই মাদ্রাসায় শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, সুদূর আসাম, বিহার ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড ও উড়িষ্যার ছাত্ররাও এই মাদ্রাসায়শিক্ষারত।

বর্তমানে মাদ্রাসার পাঠক্রম সংক্ষিপ্তভাবে নিম্নে প্রদত্ত হলো-

প্রথম শ্রেণি থেকে নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সমস্ত পাঠ্যপুস্তক আমাদের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। হিফজ তাজবীদ (ক্যান্টিলেশন) সহ, তথসহ অ্যারাবিক গ্রামার, কনযুগেশন গ্রামার (সরফ)সিনট্যাক্স, (নাহু) প্রসোডি (বালাগাত), চিরোগ্রাফি (হস্তলিখন) ইসলামি জুরিসপ্রুডেন্স(ফিকহ),আরবী ভাষা সাহিত্য, তর্কশাস্ত্র, (মান্তিক) কোরানিক এক্সেগেসিস (কুরআন তফসীর) হাদীস ইন্টারপ্রিটেশন (হাদিস ব্যাখ্যা) বায়োগ্রাফি (জীবনচরিত)। আমরা মাওলানা স্নাতক কোর্সের ক্ষেত্রে,সম্পূর্ণ পাঠক্রম বিশ্ব বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি দারুল উলুম দেওবন্দ ও রাবেতা মাদারিসে ইসলামিয়্যার পাঠক্রমকে পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করে চলি।তথসহ আসন্ন দুই বছরের মধ্যেই আমাদের মাদ্রাসার এই পরিসরে ইনশাআল্লাহ NEET পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ কোচিং দেওয়া হবে। এই মাদ্রাসার স্নাতক ছাত্ররা সারা ভারত বর্ষ ব্যাপী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। পশ্চিমবঙ্গের বহু মাদ্রাসায় ও স্কুলে অনেকেই পাঠদান রত। অনেকেই মাদ্রাসায় বাণিজ্যিক পাঠ গ্রহণ করে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ন্যায় নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা- বাণিজ্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। অনেক স্নাতক প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করে,বিভিন্ন প্রফেশনাল কর্মকান্ডে নিযুক্ত। অনেক স্নাতক তারা বিভিন্ন জামে মসজিদে ইমামতির ও সমাজ ও আত্মশুদ্ধির মহান দায়িত্বে নিয়োজিত।

পরিসমাপ্তিতে বলে রাখি যে, মাদ্রাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কোথায়? আসুন এই বিষয়টাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করি। প্রতিটি মানুষকে তিনটি জীবন অতিবাহিতকরতে হয়। প্রথম মায়ের গর্ভেএটি একটি জীবন।দ্বিতীয় এই ধরাপৃষ্ঠ অর্থাৎ পৃথিবীর পেটে। এটিএকটি জীবন। তৃতীয় তথা শেষ – মাটির পেটে –মৃত্যুর পরের জীবন। আমরা এখন প্রথম জীবনঅতিবাহিত করে দ্বিতীয় জীবনে মগ্ন আছি, ডাকপেলেই তৃতীয় জীবনে প্রবেশ ঘটবে ইন শা আল্লাহ।একটি জীবনঅতীত, এখন বর্তমান। মৃত্যুর পরের জীবন ভবিষ্যৎ। বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ব্যক্তিরা অতীত থেকেশিক্ষা নিয়ে, বর্তমানের পটভূমিতেভবিষ্যতের কর্মসূচিনির্ণয় করে। আসুন, আমরা আমাদের অতীত জীবনের উপর একটু আলো ফেলার চেষ্টা করি।আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিযথা, হাত, পা, চোখ, কান প্রভৃতি প্রথম জীবনেইপেয়েছি। তাই না? অথচ এগুলির সেখানেকোনোপ্রয়োজন ছিল না। তাহলে এগুলি সেখানে দেওয়াহোল কেন? আসলে এগুলি প্রয়োজন দ্বিতীয় জীবনে।সত্যিইতাই, দ্বিতীয় জীবনে যদি কারও পা না থাকে,হাত না থাকে- সে নিজেকে বড় হতভাগ্য মনে করবে।কারণ: এই জীবনেএগুলি ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। তাইআমাদের স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানেন আমার দ্বিতীয় জীবনে এগুলি লাগবে, তাই এগুলিদান করলেন প্রথম জীবনে। তাহলে এই সিদ্ধান্তেউপনীত হওয়া যায়, যে প্রথম জীবনে আল্লাহ যা দিয়েছেনতা কাজে লাগাচ্ছি দ্বিতীয় জীবনে, তাহলে দ্বিতীয়জীবনে যা পাওয়া গেছে নূতন করে তা কাজে লাগাবোতৃতীয় জীবনের জন্য, এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ,সানিয়াত“য় কলমেশিক্ষার প্রয়োজনীয়তাবুদ্ধিমানেরা অতীত থেকে শিক্ষা নেয় ভবিষ্যতেরসফলতাকে আয়ত্বে আনতে, তাই না? এখন দেখি,দ্বিতীয় জীবনে নূতন করে আমরা কী পেয়েছি যা প্রথমজীবনে ছিল না।জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধি এগুলি আল্লাহদিয়েছেন দ্বিতীয় জীবনে। তাই, বুদ্ধিমানের কাজ হবেদ্বিতীয় জীবনে পাওয়া জ্ঞানকে তৃতীয় জীবন অর্থাৎমৃত্যুর পরের জীবনের সফলতার জন্য কাজে লাগাবো ইনশা-আল্লাহ।অধুনা বিশ্বের মানবমণ্ডলী দুটিভাগেবিভক্ত। একদল উদয়াস্ত পরিশ্রম করে চলে পেটভরানোর জন্য। তার, তার পরিবার, তারপরিবারের ভবিষ্যতেরপ্রজন্ম কী করে দুধে ভাতেথাকবে, তারই চিন্তায় বিভোর থাকে। অথচ এই ধরাপৃষ্ঠে‘হাতি’ নামক একটি জন্তু আছে। সবাই জানি, প্রতিদিনতার পেট ভরানোর জন্য পাঁচ মন খাবার লাগে।প্রতিদিনই হাতি খাবার পায়, অথচ হাতির চাষ নাই,চাকরী নাই, ব্যবসা নাই। তাহলে পায় কী করে?হাতিকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন যিনি তিনি সকলের রবপ্রতিপালক, তাই তিনিইব্যবস্থা করেন হাতির পাঁচমন খাবারের। ‘শকুন’ নামে পৃথিবীতে এক জাতীয়পাখী আছে সে ‘গোস্ত’ (মাংস) খায়। অথচ শকুনদেরগরু, বাছুর, হাঁস-মুরগী বা পোল্ট্রী নেই। তাহলে সে ‘গোস্ত’‘পায় কী করে? ‘শকুন’ কে দুনিয়ায়পাঠিয়েছেন যিনি, তিনি তো তার ও সকলের রব ওপ্রতিপালক। তাই, শকুনের যখন খিদে পায়, তখনআপনার আমার গোয়ালের গোরু মোষকে মেরেভাগাড়ে উপস্থাপন করা হয় শকুনের খাবার হিসাবে। আসুন সবাই ভাবি, যে আল্লাহ হাতিকে চাষ চাকরি ব্যবসা ছাড়া পাঁচ মন খাবার পৌঁছান যে আল্লাহ শকুনকে বিনা মাধ্যমেই গোশত পৌঁছান সে আল্লাহ সৃষ্টির সেরা মানুষকে পাঁচশত চালের ভাত বা খোরাক পৌঁছাতে পারেন না? অবশ্যই পারেন। শুধু আমাদের বিশ্বাসের অভাব। আমার কথার উল্টো অর্থ কেও বুঝবেন না, যে তাহলে কিব্যবসা ও অন্যান্যজীবিকাসমূহ ছেড়ে দিতে বলছি ? না, তা বলছি না। বলছি দ্বিতীয় জীবনে পাওয়া জ্ঞানটাকে পুরোপুরি উদর পূর্তিতে না লাগালেও চলত।

এবার আসি দ্বিতীয় দলের কথা। দ্বিতীয় দলের ভাবনা মানুষের উন্নতি ঘটাতে হবে। কাজেই দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন মানব কল্যাণে। অবশ্যই তাঁরা ধন্যবাদের যোগ্য। আমি গভীরভাবে বাস্তবতার নিরিখে ভেবে দেখতে অনুরোধ করব। মানব উন্নয়নে সকলেই শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের কথা বলেন। সত্যিই তো, শিক্ষাই চেতনার পরিবর্তন আনে। চলুন ফিরে যাই আজ থেকে একশত বছর পূর্বে, তখন শিক্ষিতের হার যা ছিল এখন তো তার থেকে দশ গুণেরও বেশি। অথচ তখন মনুষত্বের যে বিকাশ মানুষের সাথে মানুষের পাশে থাকার যে প্রবণতা দেখা যেত এখন তার হার অনেক কম, তাই না? কেন এমন হলো শিক্ষার হার বাড়ল মানুষ শিক্ষিত হল অথচ মনুষত্ব হারিয়ে গেল কেন? ভেজাল, ঘুষ, পর্ন, শিশু পাচার, নরহত্যা এসবই কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিতদের নেতৃত্বেই! ৫৫ কেজি ধানে ৫ কেজি ধুলো মিশিয়ে অশিক্ষিত মানুষ বড়জোর একজন ধান ওয়ালার ক্ষতি সাধন করে। কিন্তু বেবি ফুডে ভেজাল দিয়ে,ওষুধ ইনজেকশনে ভেজাল দিয়ে হাজার হাজার শিশু বা মানুষের ক্ষতি যারা করে তারা কিন্তু তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত। কোটি কোটি টাকা ঘুষকান্ডে যারা জড়িত হচ্ছেন। তাঁরা কিন্তু উচ্চশিক্ষিত। বরপণ নামক হারাম প্রথাকে সমাজে বেশি প্রতিষ্ঠিত করছেন উচ্চশিক্ষিতরাই। বোমা রকেট বিমান হানায় লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে নিমেষে মৃত্যুর গহবরে পাঠানোর নেতৃত্বে উচ্চ শিক্ষিত ও বড় বড় চেয়ার অধিকার করা মানুষেরা। শিশু পাচারকারী ডাক্তারেরা নার্সরা শিক্ষিত তাই না? তাহলে কি এতসব তথ্য তুলে আমি শিক্ষার বিরুদ্ধে যুক্তি খাড়া করছি? না! না! না! আমিও একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নগন্য একজন শিক্ষক। আমি যেটা বোঝাতে চাচ্ছি সেটা হল উচ্চশিক্ষিত মানুষ তারা আমাদের সমাজের মাথার তাজ। তবে দামি গাড়ি কিনলাম পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিয়ে, দামি গাড়িতে যদি ব্রেক না থাকে ,তাহলে দামি গাড়ির আরোহীরা গন্তব্যস্থলে না পৌঁছে খুব সহজে কবরস্থানে পৌঁছে যাবে। তাই ব্রেক লাগানো জরুরী। আখেরাতের ব্রেক! আল্লাহ সবকিছু দেখছেন প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব তার কাছে দিতেই হবে এই ভাবনার ব্রেক। দুনিয়াই সব নয়, দুনিয়া আখেরাতের চাষভূমি মাত্র। বর্ষাকালে মানুষ জান-মাল, সময় লাগায় পৌষ মাসে সোনালী ধানের শীষে গোলা ভরানোর জন্য। অনুরূপভাবে বর্ষা রূপী এই দুনিয়ার জান-মাল, সময় লাগাবে পৌষমাস রূপী আখেরাতের সোনার ফসলের তথা জান্নাতের হকদার হওয়ার জন্য। তাই ব্রেক জরুরী। চলতে-থামতে-ছাড়তে ব্রেক জরুরী। সেই ব্রেকের ব্যবহার জানানোর জন্যই এই মাদ্রাসা শিক্ষার প্রয়োজন। কুরআন হাদিসের আলোয় আলোকিত হয়েছেযেমা বাপের হক জানবে, হক জানবে দেশ ও দশের। দুজাহানের কামিয়াবির জন্য নিজের কোরআন ওয়ালা জিন্দেগি যাপন করবে। তামাম ইনসানকেও সেই আলোর পথের পথিক করার মহান কাজে ব্রতী হবে। দেশ ও দশ এই মাদ্রাসার শিক্ষার ফলে উপকৃত হবে। সুস্থ সমাজ তৈরি হবে। স্রষ্টা খুশি হবেন। দুনিয়ার সৃষ্টি সার্থক হবে।

এখানেই শালুকপাড়া মাদ্রাসা আশরাফুল উলুম তথা সারা বিশ্বের সমস্ত দরসে নিজামি মাদ্রাসার স্বতন্ত্রতা।মানবতাকে নিয়ে যারা ব্যবসা করছে, মিথ্যার বেসাতি করছে,হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ পরায়ণতা ,প্রতিশোধ প্রবৃত্ত,স্বার্থান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও নিজেকে নিয়ে মগ্ন থাকার আপাত জাতীয় রোগ থেকে বাঁচতে, ও অন্ধকার থেকে দেশ ও দশকে বাঁচাতে, আসুনসবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাদ্রাসা গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে ও প্রাণবন্ত করে তুলতে ও সঠিক পথে চালাতে একশ শতাংশ সচেষ্ট হই। আল্লাহর সমীপে আসুন সবাই দোয়া করি শুধু কোরআন ও হাদিস শেখা ও জানা নয়। প্রকৃত কোরআন ও হাদিস অনুসারী হওয়ার ও বানানোর ইখলাস পূর্ণ মেহনতে আল্লাহ যেন আমাদেরকে শামিল করে নেন। তিনি ঐক্যের মেহনতের সুধীর বন্ধনকে মজবুত করুন। আল্লাহ আমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে এখলাসের রসে সিক্ত করে কবুল করে নিন ।আমীন সুম্মা আমীন।

Shalukpara Madrasah Ashraful Uloom

An Appeal

Shalukpara Madrasah Ashraful Uloom, situated at shalukpara, Naul,Shyampur, Howrah is one of the most prestigious and ideal institution with an humanitarian outlook which teaches the 'Deen' since 1970 continuously with a view to enrich society. With the grace of Allah Rabbul Alamin and the help of wise and benevolent people our institution is improving in its every form day by day. The people driven by the thirst of knowledge come here to gain ideal knowledge from all over country. The students of this institution got the opportunity to carry on further studies in deoband darul uloom and in other famous institute by the virtue of their knowledge and wisdom. The former students of this institution is serving the purpose of deen education in many states. The students of this institution has earned remarkable achievement in the Rabeta Board Examination. To enrich and improve our institution in the coming days we expect some monetary help and co-operation so that we can help the orphans and the poor students with the education of din. May you fulfill the purpose of merciful graceful Allah.... Mufti Mohammad Ibrahim Mazahari(Secretary) And Maulana Musa Kalimullah(Principal)